ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে একটা ‘Effect of Sleep Deprivation’ এক্সপেরিমেন্ট দেখছিলাম। যে টানা ৩৬ ঘণ্টা না ঘুমালে কি কি সমস্যা হয়। দেখালো যে, মোটর রিফ্লেক্স কমে যায়, মানে Voluntary পেশীর ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে যায়। আপনার হাতে কোন কিছু ধরিয়ে দিলে সেটা বেশিক্ষন ধরে রাখতে পারবেন না, হাত থেকে পড়ে যাবে। তারপর Reaction Time বেড়ে যায়। কোনো কিছুর প্রতি প্রতিক্রিয়া দিতে সময় বেশি লাগবে। মানে গাড়ি চালাতে চালাতে হটাত ট্রাফিক লাইট লাল হয়ে গেলে ব্রেক করতে দেরি হবে(যদিও বাংলাদেশে সেই ভয় নেই :3 ); ফলাফল একটি দুর্ঘটনা আর সারাজীবনের কান্না।
লংটার্ম স্মৃতিশক্তি ক্রমশই কমে আসবে, এটা ওটা ভুলতে শুরু করবেন, ডাটা প্রসেসে সমস্যা হবে, (মানে বউ হাফ লিটার সয়াবিন আনতে বললে আপনি একটা প্যারাসুট নিয়ে এসে ক্যালাতে থাকবেন)। তবে শর্টটার্ম স্মৃতিশক্তি আগের মতই থাকবে।
আর এর সাথে যদি খাওয়াদাওয়াও বাদ দেই? হিমুর কোন এক বইয়ে যেন পড়েছিলাম, তিনদিন না খেয়ে থাকার কথা... অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয় নাকি। ভাবছি, আমিও টানা তিনদিন ঘুমাব না, আর... আর খাবোও না :P একবার করতে ইচ্ছা হচ্ছে। খুব একটা কষ্ট হওয়ার কথা না। আমার মাঝে মাঝে হ্যালুসিনেট করতেও খুব ইচ্ছা হয়। হ্যালুসিনেক্সিন না কি যেন একটা ড্রাগ আছে। ওটা খেলে হ্যালুসিনেশন হয় :3
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ বলেন,-
‘তিনিই তো তোমাদের জন্যে রাত্রিকে করেছেন আবরণ, নিদ্রাকে বিশ্রাম এবং দিনকে করেছেন বাইরে গমনের জন্যে।’
আল্লাহ্ রাত দিয়েছেন ঘুমানোর জন্য, আর আমি কিনা পুরো রাতটাই জেগে থাকি :/
তবে রাতের মৌনতা, এর আঁধার আমার ভালো লাগে। জানালার ধারে বসে শীতপ্রবাহমানবাতাসের ঠাণ্ডা অনুভুতি ভালো লাগে, আবার পূর্ণিমার চাঁদ দেখে যে জোছনাউষ্ণ রোমাঞ্চ তৈরি হয় শরীরে তাও ভালো লাগে। অন্ধকারে তাঁরা ভরা আকাশ দেখতে ভালো লাগে, সেই আকাশ দেখে গান গাইতে ভাললাগে-
‘তারাগুলো জেগে আকাশে, জেগে আছে এই দুটি চোখ,
সপ্ন বুনে একা গোপনে, ভুলে গিয়ে যত অভিযোগ।
এক মুঠো প্রেম নিয়ে বাড়িয়ে দু’হাত, বন্ধু হয়ে প্রেম এসেছে,
তোমায় দেখব বলে নয়ন ভরে, হয়ত তোমায় ভালবেসেছে।’ [Symbol]
রাতে মাঝে মাঝে নিজেকে দেখতে পাই, সোফায় বসা, বা সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছে। তার সাথে(অথবা আমার সাথে) কথা বলি, আলোচনা করি। মানুষ ভাববে আমি পাগল হয়ে গেছি :3 তবে নাহ, আমি সুস্থই। আমার কল্পনাশক্তি হয়ত একটু বেশিই।
ঘুমের মধ্যে Neurotransmitter এবং অন্যান্য কেমিক্যাল অপসারিত হয়, কলা(Tissue এর বাংলা কলা :P ) Regenerate হয়, হাড় বড় হয় etc. etc.
ঘুমে সাধারণত ৫টা ষ্টেজ থাকে, প্রতি ৯০-১১০ মিনিট পরপর আবার প্রথম ষ্টেজ থেকে শুরু হয়।
১ম ষ্টেজ(১-৭ মিনিট)- এটাতে শুধু ভেসে যাওয়া ঘুমের দিকে, ব্রেইন পুরপুরি সক্রিয় থাকে।
২য় ষ্টেজ(১০-২৫ মিনিট)- ব্রেইন সক্রিয়তা কমতে থাকে, এই সময় সহজেই ঘুম ভাঙ্গানো যায়।
৩য় ষ্টেজ(২০-৪০ মিনিট)- ঘুম ভাঙ্গানো আরও কঠিন হয়।
৪র্থ ষ্টেজ(২০-৪০ মিনিট)- এটা সবথেকে গভীর ষ্টেজ, এই সময় ঘুম ভাঙ্গতেই চায়না। পেশীগুলো নরম হয়ে আসে, শ্বাসপ্রশ্বাস একটা ধীর ছন্দে এসে যায়, এবং এই সময়টাতেই নাক ডাকা শুরু হয়!
৫ম ষ্টেজ(১০-৬০ মিনিট)- ব্রেইন আবার পুরপুরি সক্রিয় হতে শুরু করে, এই সময়টাতেই স্বপ্ন দেখে মানুষ, চোখ নড়তে থাকে, Rapid Eye Movement, শরীরের Voluntary পেশীগুলো সাময়িকভাবে Paralyze হয়ে যায় আর এ সময় ঘুম ভাঙলে মানুষ নড়াচড়া করতে পারেনা, এবং এই এটাকেই বোবায় ধরা বলে।
যাই হোক, প্যাঁচাল বাদ। মোদ্দা কথা হল অযথা রাত জাগা ঠিক না। আল্লাহ্ রাত দিয়েছেন ঘুমানোর জন্য। নিয়ম হল, এশার নামাজ পরেই কিছুক্ষন পর খাওয়াদাওয়া করে শুয়ে পড়া। তবে কাউকে উপদেশ দিতে গেলেই রাসুলের সেই চিনি খাওয়ার গল্পটা মনে পড়ে যায়। :3 একটা বিখ্যাত(!) উক্তি দিয়ে শেষ করি,-
‘যারা ঘুমানোর সময় জেগে থাকে এবং জেগে থাকার সময় ঘুমায়, তারা দেশের বোঝা।’ :P
#রাত_কাঁদে
No comments:
Post a Comment