অন্ধকার ঘর। তবে ঠিক পুরোপুরি অন্ধকার না, দূরে এক বহুতল ভবনের নীল-সবুজ নিয়ন আলো এসে ঘরে ঢুকছে, এবং এতে ঘরটা যেন আরও আঁধারে ডুবে গেছে।
গুলশান অ্যাভিনিউ এর পাশে একটি অভিজাত হোটেলের ৩০১ নাম্বার রুমে খাটে বসে জানালা দিয়ে দুরের আলোর দিকে তাকিয়ে ছিল আসিফ। তবে তার মন পড়েছিল অন্যজায়গায়। জীবনটা আজকাল কেমন পানশে লাগে, কোন কিছুই আর ভাল লাগেনা। সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত হয়েও রাতে শুয়ে আর ঘুম আসেনা। রাজ্যের চিন্তা সব মাথায় খেলা করে। কি এলোমেলোই না তার জীবন।
আচ্ছা, একটা মানুষ কিভাবে পারে চার চারটি বছর কারো সাথে অভিনয় করে যেতে? এতগুলো দিন আপন করে রেখে মুহূর্তেই দূরে সরে দিতে? জানে না আসিফ। সে শুধু জানে সে এখন সর্বহারা। পরিবার পরিজন তো কখনো ছিলই না, ভালবাসাটাও ধোকা দিয়ে ছোবল মেরে গেল। ব্যাংক ব্যাল্যান্স যায় যাক, হৃদয়টাও যে আর রইল না। মাঝে মাঝে জীবনটাকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে, কি হবে তার বেঁচে থেকে? সে মারা গেলে কেউ খোঁজও নিতে আসবেনা।
না, একজন অবশ্যি আসবে। ফয়সাল। তার এই হতাশাময় জীবনে যদি ভালো কিছু উল্লেখ করার মত কিছু থাকে তবে এই ছোটবেলার বন্ধু। এই বন্ধুর কাছেই তো জীবনের সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভাগ করে নেয়া যায়, এই বন্ধুই তো কত সাহায্য করল সবসময়, যখন কাছে আর কেউ ছিলনা। কতবার সে নিজের জীবনকে শেষ করার কথা ভেবেছে, ফয়সালই তো বারবার ফিরিয়ে আনল।
‘আত্মহত্যা মহাপাপ, বুঝসস? এমনে সুইসাইড খেয়ে কেউ মরলে স্ত্রেইট হেল! যত ভাল কামই করস না ক্যান। সো, সুইসাইডের কথা মাথা থেকে আউট কর।’
আজও আসিফ ফয়সালের জন্য অপেক্ষা করছে। তার ৯ টায় আসার কথা, এখন ৯টা ১০ বলছে ঘড়িতে। এসে পড়বে হয়ত কিছুক্ষণে। বলেছিল আজ নাকি তার জন্য একটা সমাধান নিয়ে আসবে। শাবাশ! এই না হলে বন্ধু!
দরজায় মৃদু আওয়াজ শোনা গেল। প্রথমে দু’বার ঠক! ঠক! তারপর একটু সময় নিয়ে আরও একবার। এটা ওর নক করার স্টাইল।
দরজা খুলে দিল আসিফ। ফয়সালের পরনে কালো একটা হুডসহ লেদার জ্যাকেট, সাথে গ্লাভস। বাইরে বেশ ঠাণ্ডা পড়েছে ইদানিং। আসিফ তাকে ভেতরে আসতে বলে রুমের লাইটগুলো দিতে গেল, দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ইতিমধ্যে পেছনে চলে এসেছে ফয়সাল। এখন পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি। গ্লাসে পানি ঢালছিল আসিফ, হটাতই চোখের সামনে চারপাশ কেমন অন্ধকার হয়ে গেল। হাত থেকে সশব্দে কাচের গ্লাসটা মেঝেতে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। নিজের অজান্তেই বাম হাতটা মাথার পেছন দিকে চলে গেল। রক্ত! লাল, তাজা রক্ত! কিছু বোঝার আগেই শক্ত ভারি কিছু একটা দ্বিতীয়বার মাথায় আঘাত হানল। এবারে পেছন ফিরল আসিফ। চোখে বিস্ময় নিয়ে আর দাড়িয়ে থাকতে পারলনা। ধপাস করে ভাঙ্গা কাচের টুকরোগুলোর ওপর পড়ে গেল সে!
হাত থেকে লোহার রডটা ফেলে দিল ফয়সাল। মুখে তৃপ্তির হাসি। বন্ধুকে সে সমাধান এনে দিতে পেরেছে। তার বন্ধুকে এই দুর্দশার জীবন থেকে মুক্তি দিতে পেরেছে সে। হ্যাঁ, কাজটা তাকেই করতে হয়েছে। সে তো আর আসিফকে নিজের জীবন নিতে দিতে পারত না। আত্মহত্যা যে মহাপাপ!
No comments:
Post a Comment