Friday, 23 June 2017

হিসাববিজ্ঞান- এক কিশোরীর গল্প


সন্ধ্যার আকাশ। ডুবন্ত সূর্যের গোধূলি আভা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, নিস্তব্ধতা আর বিষণ্ণতার চাদরের আড়ালে সবকিছু ঢেকে গিয়েছে, সাথে উর্বশীর মনটাও। বিষাদ মাখানো আবেগগুলো বেরিয়ে আসতে চাইলেও উর্বশী প্রাণপণে সেগুলো আটকে ফেলার চেষ্টা করছে। অবশ্য খুব একটা যে সফল হচ্ছে তা বলা যাবেনা, খানিক পরপরই সেগুলো অশ্রু হয়ে দু’গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে।  
কিছুই হয়নি, খালার কাছে বকা খেয়েছে মাত্র। একটু-আধটু মেরেছেনও বটে। তবে সেগুলো গায়ে মাখালে চলে? খালাই তো। উর্বশী তার মা-বাবাকে হারানোর পর এই ঢাকা শহরে যখন তার কেউ ছিলনা, তখন এই খালাই তো তাকে কাছে রেখেছেন, একটা কাজও জোগাড় করে দিয়েছেন। রোজ এই খালা কে ধরা ১০০টাকা দিতে হয় রোজগার থেকে, সেটা তো দিতেই হয়, খালা যে থাকতে দিচ্ছেন, খেতে দিচ্ছেন, তার বদলে উর্বশী এটুকু দিতে পারবেনা?! আর বাকি যা বেচে যায়, তা পুরোটাই উর্বশীর!  শুধু আজ ৫০টাকা কম দিয়েছিল সে, তাতেই এই পিটুনি!    
চন্দ্রিমা-উদ্যানে বসে এই সময়টায় কোন কিশোরীকে শাড়ী পড়ে, খোঁপায় বেলী ফুলের মালা দিয়ে, লাল টিপ দিয়ে একা বসে কাঁদতে দেখলে যে কারোরই অবাক হওয়ার কথা। তবে ঢাকা শহরের মানুষের অবাক হওয়ার ক্ষমতা হয়ত দিনদিন কমে যাচ্ছে, তাই কেউ সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করছে না। দু’একটা ছেলেপিলে যাওয়ার সময় বেশ জোরসে শিস ফুটিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, তবে কাছে পিছে আসছে না কেউ।  
আসবেই বা কেন। এখন রেট অনেক বেশি, ১০টার পর কমতে শুরু করবে, তখন আসা যাবে। মানুষ আর কিছু বুঝুক না বুঝুক, হিসাববিজ্ঞান ভালোই বোঝে!  

                                   -মনিফ শাহ্‌ চৌধুরী।  

No comments:

Post a Comment

রোগ- সাইকো গল্প

সকাল ৮টা   অ্যালার্ম  ঘড়ির প্রচণ্ড  বি রক্তিকর  শব্দে ঘুম ভাঙল মোহনার।  বিছানায়  শুয়ে  থেকে পুরো ঘরটার ওপর  একবার চোখ  বুলিয়ে   নিল  ...