Friday, 23 June 2017

ইব্রাহীম (আঃসাঃ) এর গল্প


স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন ইব্রাহীম।  
গত রাতেও একই স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। স্বপ্নে তাকে একটি আদেশ দেয়া হয়েছে। ‘তুমি তোমার প্রিয় বস্তু কুরবানি কর” । হ্যাঁ, এমনটাই ছিলো। গত রাতে স্বপ্ন দেখে তিনি আজ একশটি উট কুরবানি করেছেন। ভেবেছিলেন হয়ে গেছে দায়িত্ব পূরণ। কিন্তু আজ আবারও একই স্বপ্ন কেনো দেখলেন তবে? একটু চিন্তিতই হন। কাল আবার একশটা উট কুরবানি দিবেন, ভাবলেন তিনি।  

তৃতীয় রাত।  
আজ ও স্বপ্ন দেখে উঠলেন ইব্রাহীম। আজকের আদেশ টা একটু আলাদা। আজ বলা হয়েছে, “ইব্রাহীম, তুমি তোমার সর্বাপেক্ষা অধিক প্রিয় বস্তু আমার উদ্দেশ্যে কুরবানি কর”।  
ভাবতে বসলেন তিনি। সর্বাধিক প্রিয়? প্রিয় তো অনেক কিছুই... হটাৎই থামলেন ভাবতে ভাবতে। প্রিয় পুত্র, কলিজার টুকরা চেহারা ভেসে উঠল তার মনে। ইসমাইলই তো। সবথেকে প্রিয়, দীর্ঘ জীবন সন্তানহীন থাকার পর, একেবারে বৃদ্ধ বয়সে এই পুত্রকে পেয়েছেন তিনি। কত প্রার্থনা, কত প্রতীক্ষা, তারপর হাজেরার কোল আলো করে আসলো ইসমাইল। 
আবার এই পুত্রকেই তার মা সহ জনমানবহীন  মক্কাতে নির্বাসন দিয়েছিলেন, তখন ইসমাইল একদম নবজাতক! তাও রেখে এসেছিলেন, কারণ এমনটিই আদেশ হয়েছিলো। তার মা পিছন থেকে বারবার বলছিলো, “ ও ইব্রাহীম, আপনি কোথায় যাচ্ছেন এই উপত্যকায় আমাদের রেখে যেখানে কেউ নেই, কিছুই নেই?”  
ইব্রাহীম একবারও ফিরে তাকাননি!  
আজও দেখতে গেলে ভিন্ন কোনো পরিস্থিতি তো নয়। আজও একটা আদেশই এসেছে, যেমনটা তখন এসেছিলো। আজও তেমনি ভাবেই পালন করতে হবে আদেশ, যেমনি তখন করেছিলেন! মনে কোনো দ্বিধা থাকলে চলবে না!  

পুত্রকে সুন্দর পোষাকে তৈরী করে নিয়ে গেলেন তিনি। যেন কোনো দাওয়াত খেতে যাচ্ছেন পিতা-পুত্র। তারা চলতে চলতে মিনা নামক স্থানে পৌঁছালেন। ইব্রাহীম ভাবলেন পুত্রকে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য জানানো উচিৎ! তিনি পুত্রকে সম্বোধন করে বললেন,  
-“ও আমার আদরের পুত্র, আমি স্বপ্নে দেখেছি যেন আমি তোমাকে কুরবানি করি। তোমার কি মত?”  
ইসমাইল নেহাৎই বাচ্চা, তবে সাধারণ কেউ নয়!  
-“ও আমার আদরের পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তেমনই করুন। আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।“  
ইব্রাহীম পুত্রের উত্তরে খুশি হলেন!  

এদিকে ইবলিস(শয়তান) মা হাজেরার কাছে এক মানুষের বেশ ধরে গেল। উদ্দেশ্য, সব বলে দিকে হয়তো হাজেরা পুত্রমায়ায় ইব্রাহীম কে বাধা দিতে যাবে!  
মা হাজেরা প্রথমে শুনে বিশ্বাস করলেন না! পুত্রকে কি কখনো পিতা হত্যা করতে পারে!  
ইবলিস বলল, “আমি সত্যিই বলছি, বিশ্বাস করুন। আল্লাহই এমনটা আদেশ দিয়েছেন!”  
হাজেরা এবার বলেন, “ ওহ, আল্লাহ আদেশ করেছেন? তাহলে তো কোনো কথাই নেই! তুমি একাজে বাধা দিতে এসেছ, মানে নিশ্চয়ই তুমি শয়তান!!” এই বলে মা হাজেরা ইবলিসের দিকে পাথর ছুড়ে মারতে লাগলেন! অবস্থা বেগতিক দেখে ইবলিস সেখান হতে পালালো!  

এদিকে পিতা-পুত্র কুরবানি করার নির্ধারিত জায়গায় পৌছে গেছে। একটা পাথরের ওপর ইসমাইলকে শোয়ালেন। হয়তো একটু সময় নিচ্ছিলেন। পিতাকে এমন অবস্থায় দেখে ইসমাইল বলল, “আব্বু, আপনি আমার হাত-পা বেধে দিন, নাহলে আমি হাত-পা যদি ছোড়াছুড়ি করি, আপনার কুরবানি করতে সমস্যা হবে, আর আপনার গায়েও রক্ত লাগতে পারে।“  
ইব্রাহীম পুত্রের কথা মত কাজ করলেন।  
পুত্রের গলায় ছুরি বসালেন, ছুরি চালালেনও,  কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার! ছুরি ইসমাইলের গলা কাটছে না!  

শিশু ইসমাইল ভাবল, পিতা হয়তো আবেগের বশে ছুরি চালাতে পারছেন না। “আব্বু, আপনি আপনার চোখ বেধে নিন।“   
তাই হল। চোখ ভালো মত বেঁধে নিয়ে ইব্রাহীম আবার ছুরি চালালেন।  

এদিকে, জিব্রাইল সব লক্ষ্য করছিলেন, পিতার হাতে পুত্রের কুরবানির করুণ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করছিলেন। তখনি তার প্রতি আদেশ আসে। আর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তার ছয়শত ডানা নিয়ে উড়ে চললেন!  
  
 কিছু একটা কাটলো, বোঝা গেল। তিনি চোখের বাঁধন খুলে ফেললেন। আর অবাক হয়ে দেখলেন, পাশেই পুত্র ইসমাইল দাড়ানো! আর... আর সামনে একটা দুম্বা! সেটা জবেহ হয়েছে, ইসমাইল না!       
ইব্রাহীমকে অবাক দেখায়, তবে কি কবুল হল না? আকাশ থেকে বাণী আসে, “হে ইব্রাহীম তুমিতো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ নিশ্চয় আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি  


No comments:

Post a Comment

রোগ- সাইকো গল্প

সকাল ৮টা   অ্যালার্ম  ঘড়ির প্রচণ্ড  বি রক্তিকর  শব্দে ঘুম ভাঙল মোহনার।  বিছানায়  শুয়ে  থেকে পুরো ঘরটার ওপর  একবার চোখ  বুলিয়ে   নিল  ...