সন জানা নেই, কারণ জানার প্রয়োজন নেই। পৃথিবী থেকে সব অপ্রয়োজনীয় ব্যপার তুলে দেয়া হয়েছে।
একটি অন্ধকার ঘরে একজন মানুষ বসে আছেন। তার নাম নেই। পৃথিবীতে এখন কারোরই নাম নেই। ১০০ বছর আগেই বিজ্ঞান একাডেমি তে নাম তুলে দেয়ার এই সিদ্ধান্ত পাশ হয়। কারণ? কারণ নাম ও একটা বাহুল্য, অপ্রয়োজনীয়। নামের প্রয়োজন তো তখন পরবে যখন ভিন্ন ভিন্ন মানুষ থাকবে। পৃথিবীতে এখন কেউই আলাদা নয়, সবাই অভিন্ন।
মানুষটি কে দেখে বিরক্ত মনে হচ্ছে, সাথে একগাদা হতাশাও তার চেহারায় বিদ্যমান। তিনিই পৃথিবীর শেষ মানুষ যার জন্ম স্বাভাবিক ভাবে হয়েছিলো। অবশ্য ‘স্বাভাবিক’ শব্দটা আপেক্ষিপ। প্রাকৃতিক শব্দটা ব্যবহার করা উচিত।
মানুষটির অনীহার প্রধান কারণ হচ্ছে, এই পৃথিবীতে তার মনে হয় আর কিছুই জানার বাকি নেই। সবই তো আবিষ্কার হল যা হওয়া সম্ভব ছিলো। পৃথিবীতে এখন আর দাঙ্গামা, অপরাধ, নির্যাতন কিচ্ছু হয় না। পুরো সৌরজগতই নিরাপদ। ভয় নেই, ক্ষুধা নেই, পিপাসা নেই। অযথা সময়ও নষ্ট হয় না আর শরীর থেকে বর্জ্য বের করতে। আর এর থেকে বড় কথা, সবাই এক! সব মানুষই এই মানুষ!
এর জন্য অনেক কাঠখড় ও পোড়াতে হয়েছে। কত পরিকল্পনা করে করে সে আজ এতদুর এসেছে। ৫২৩ বছর আগে, সে, যখন প্রযুক্তির যুগ ছিলো, তখন তাকে প্রতিটা রাষ্ট্রের নিউক্লিয়ার অস্ত্রগুলো আগে হ্যাক করে বিস্ফোরণ করতে হয়েছে! সে কি ভয়াবহ অবস্থা ছিলো সে দিনগুলো! ভাবলে এখনও গা শিউরে ওঠে। টানা ৫দিন পৃথিবীর বুকে সুর্যের আলো পড়েনি, ধ্বংসস্তূপের ছাই, কয়লা দিয়ে চারিদিক ঢেকে ছিলো। এর পরেও অনেকে বেচে ছিলো। দ্বিতীয় বার তাই ৭৪৬৬৬২-এম স্ট্র্যান্ডের এক এয়ারবোন ভাইরাস দিয়ে তাদের শেষ করতে হয়েছিলো! দেখতে গেলে খুব দ্রুতই কাজ হয়েছিলো!সাত বিলিওন মানুষ বলে কথা! সব শেষ! এবং এটার প্রয়োজনও ছিলো। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর আলোচনা তুঙ্গে উঠেছিলো। হয় মানুষ পৃথিবী শেষ করে দিত, নয়তো পৃথিবী মানুষ কে! দ্বিতীয়টাই যুক্তিসম্পন্ন ছিলো।
সে সবসময়ই বিশ্বাস করতো বুদ্ধিমত্তার উদ্দেশ্যই হল অজানা কে জানা। তাই মানুষহীন পৃথিবীকে নতুন করে সাজাতে সে নিজের ক্লোন বানানো শুরু করলো। সে একাই অনেক হয়ে গেলো। সে এক, এবং অসংখ্য!
কত কিএ না আবিষ্কার হল। সে জানতো ক্লোনদের নিয়ন্ত্রন করার জন্য হলেও তার বেঁচে থাকা দরকার। তাই জোর গবেষনা চলল। যুগের পর যুগ পার হয়ে গেলো, এবং সাফল্য দেখা দিলোই! জানা গেলো, নেলাটোনিন নামের এক হরমোন, যা পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসরণ হয়, তা বয়স বৃদ্ধির জন্য দায়ী। একবার এই হরমোনের সংশ্লেষণের জন্য জিন কোড তা পাওয়ার পরেই জিন এডিটিং এর মাধ্যমে তা সরিয়ে ফেলা কোনো ব্যাপারই ছিলো না। আক্ষরিক অর্থেই সে অমর হয়ে গেলো!
হ্যা অমর! কারণ সৃষ্টিকর্তায় সে কোনোদিনই বিশ্বাসী ছিলো না। যদিও প্রাচীন কালের ধর্মগ্রন্থের কিছু উদ্ধৃতি তার ভালো লাগতো। যেমন, হাদিস থেকে, “কোনো রোগ নেই যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, যার প্রতিকার তিনি সৃষ্টি করেননি।‘
মৃত্যুও কে সে রোগই মনে করে।
কিন্তু এখন আর কিছুই বাকি নেই জানার। কথাটা ভুল। এখনো মৃত্যু কে জানা বাকি আছে। মানুষ সব সময়ই মৃত্যুকে ভয় করে এসেছে, কারণ মৃত্যু অজানা। কিন্তু যখন এক্মাত্র অজানা জিনিস মৃত্যুই হয়, তখন্তা জানার আগ্রহ অনেক গুন বেড়ে যায়। কি হবে এই বুদ্ধিমত্তার যদি মৃত্যুই আস্বাদন না করতে পারে! মৃত্যুকে জানতে হবে!
চিন্তা করলো সে। আর ব্যাস! পুরো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ৬৬৬৪৩-ও স্ট্র্যান্ডের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ল। মারাত্মক এ নতুন ভাইরাস শুধুমাত্র এই মানুষটির জন্য বানানো। কেনো বানিয়েছিলো নিজেরও মনে নেই। পৃথিবীতে নতুন বুদ্ধিমত্তা আসুক, মানুষের দিন শেষ! অনেক হাল্কা লাগছে তার। নিজের অসংখ্য স্বত্বা কে নিয়ে সে একসাথে মৃত্যু জানতে চলেছে। রোহমর্ষক বটে!
অতল ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার শেষ মুহুর্তে তার চিন্তা ছিলো,
“আমি কি সত্যিই অমর হতে পেরেছিলাম?”
No comments:
Post a Comment