Friday, 23 June 2017

ভাগ্য ও ফ্রী উইল

অনেকে বলেন আল্লাহ আমাদের সবার ভাগ্য যেহেতু নির্ধারণ করে দিয়েছেন তাহলে আমরা ভাল কাজ করি আর মন্দ কাজ করি, আল্লাহ আমাদের বিচার করবেন কেন? [Symbol] তাহলে একটা গল্প শোনা যাক।  
একদা এক ব্যক্তি ছিলেন। যাত্রা পথে নামাজের ওয়াক্ত হয়ে যায়। তিনি মসজিদে নামাজ পড়তে চাইলেন, কিন্তু বাধ সাধল সাথের উটটি। উটটা কোথায় রেখে যাবেন তাই ভাবছিলেন। এমন সময় এক বালক এসে বলল, চাচা, আপনি নিশ্চই নামাজ পড়বেন? আপনি নির্দ্বিধায় যেতে পারেন, আমি আপনার উট পাহারা দিচ্ছি।  
লোকটি খুশি মনে নামাজ পড়তে গেলেন।  
এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল বালকটা। লোকটা চলে যাওয়ার সাথে সাথে ধূর্ত বালকটি উটের পিঠের জিন খুলে নিয়ে পালিয়ে গেল। লোকালয়ের ভেতর এক বাজারে সেটি বিক্রি করে খুশিমনে দুই দিরহাম নিল সে।  
এদিকে লোকটার নামাজ শেষ। তিনি ভাবছিলেন যে যেই বালকটার জন্য আজকে তিনি নিশ্চিন্তে নামাজ আদায় করতে পারলেন তাকে তিনি দুই দিরহাম বখশিশ দিবেন। খুশি মনে মসজিদ থেকে বের হলেন।  
ওমা! কোথায় সেই বালক?! উটটা শুধু এক প্রান্তে বসে আছে, আর... আরে! উটের পিঠের জিন কোথায় গেল?! বুঝতে বাকি রইলোনা তাঁর যে তাঁর কাছ থেকে চুরি করা হয়েছে। কিন্তু যা হবা তা তো হয়েই গেছে। জিন ছাড়া তো উটের সওয়ারী করাও সম্ভব না। অতএব তিনি ঠিক করলেন বাজার যাবেন, কমদামি একটা জিন কিনে নেবেন।  
বাজারে ঘুরতে লাগলেন তিনি। নানান ধরণের সামগ্রী দেখতে দেখতে হটাতই তাঁর চোখ আটকে গেল। নিজের জিনটা বাজারে ঝোলানো দেখে নিজেই অবাক। দোকানিকে ব্যাপারটা খুলে বলাতে দোকানি স্বীকার করল যে কিছুক্ষন আগে এক বালক এসে এই জিনটা সস্তায় বিক্রি করে যায়। ‘দেখুন আপনাকে দেখে ভাল মানুষ মনে হচ্ছে, জিনটা যেহেতু আপনার, তাই আমি আর ওতে লাভ করবনা। আমি যা দিয়ে কিনেছি তা দিলেই হবে। দুই দিরহাম।’  
অগ্যাত লোকটা দুই দিরহাম দিয়ে নিজের নিজেই কিনে তাঁর পথে রওনা হলেন।  

গল্পটা এখানেই শেষ। এবার পর্যালোচনার পালা। বালকটার ভাগ্যে সেদিন দুই দিরহাম ছিল। এই ভাগ্য তাঁর আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। সেদিন সে যদি উটটা সৎ মনে পাহারা দিত তাহলেও দুই দিরহাম পেত, কারন আমরা দেখেছি যে লোকটা তাঁকে দুই দিরহাম বকশিস দেয়ার নিয়াত করেছিলেন। কিন্তু সে চুরি করে বিক্রি করে দুই দিরহাম নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এবং এখানেই ফ্রি উইলের ব্যাপারটা আসে। তাঁর ভাগ্যে দুই দিরহাম ছিল, এটা আল্লাহর ইচ্ছা, কিন্তু তাঁর সামনে এই দুই দিরহাম নেয়ার দুটো পথ ছিল, হয় ঠিক মত পাহারা দিয়ে, আর নয়তো চুরি করে। এই দুই পথের মধ্যে বেছে নেয়ার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা তাঁর ছিল, এটাই ছিল তাঁর ফ্রী উইল। এটা অবশ্যই তাঁর দোষ যে সে দ্বিতীয় পথটি বেছে নিয়েছে, এবং এর উপরেই তার বিচার হবে। তাকে তার ভাগ্য সম্পর্কে না, বরং প্রশ্ন করা হবে তার এই ফ্রী উইল নিয়ে।  
হ্যাঁ। আল্লাহ অবশ্যই জানতেন যে বালকটা কোন পথ বেছে নেবে, এবং পরিশেষে পরীক্ষায় সে উত্তীর্ণ হবে কিনা। তবে কি আপনি আল্লাহ্‌ কে দোষ দিবেন যে আপনি কোন একটা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে? (নাউজুবিল্লাহ) অবশ্যই না। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। ধরুন কোন একটা ক্লাসে পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। শিক্ষক জানেন কোন ছাত্র কিরকম। তিনি জানেন যে এই ছেলেটা খুব ভাল স্টুডেন্ট, পড়াশুনা মন দিয়ে করে বরাবরই প্রথম হয়ে আসছে, এবারও হবে নিশ্চয়ই। ওই ছেলেটা মোটামুটি স্টুডেন্ট, তো শিক্ষক জানে যে সে এবারও পাশ করবে, তবে মোটামুটি। আর ওই ছেলেটা একদমই পড়াশুনা করেনা, সারাদিন টোটো করে ঘুরে বেড়ায়, আড্ডা দিয়ে বেড়ায়, প্রায় ফেল করে, শিক্ষক জানেন যে এবারও ফেল করবে।  
পরীক্ষা হল, রেসাল্ট ও দিল। শিক্ষক যেমন ভেবেছিলেন তেমনি হল। প্রথম ছেলেটা প্রথম হল, দ্বিতীয় ছেলেটা মোটামুটি করল, আর শেষ ছেলেটা ফেল করল। এখন কি আপনি শিক্ষক কে দোষ দিয়ে বলবেন যে শেষ ছেলেটা ফেল করেছে কারণ শিক্ষক জানত যে সে ফেল করবে? এটা কি যুক্তিসঙ্গত হবে? অবশ্যই না। ছেলেটার সামনে দুটো রাস্তা ছিল, হয় মন দিয়ে পড়াশুনা করে পাশ করা, আর না হলে পড়াশুনা না করে ফেল করা। শিক্ষক হয়ত জানতেন যে সে দ্বিতীয় পথটা বেছে নিবে, কিন্তু দোষতো অবশ্যই ওই ছেলের। সে দ্বিতীয় পথ বেছে নিয়েছে নিজের ইচ্ছায়, আর তার ফল হিসেবে ফেল করেছে। এর থেকে ভালভাবে আল্লাহ্‌ জানেন আমরা কি করব, কোন পথ বেছে নেব, তবে সেটা সম্পূর্ণ আমাদের স্বাধীনতায়। যে পথই বেছে নেই, ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। তবে পার্থক্যটা আমাদের পছন্দের। আমাদের ফ্রী উইলের ব্যবহার কিভাবে করলাম তার বিচার হবে। আর ভাগ্যকে অস্বীকার করা কোন বুদ্ধিমানের কাজ না। আল্লাহ্‌ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আমি মানুষের ভাগ্য তাদের গলায় হারের মত ঝুলিয়ে দিয়েছি।’ তাই ভাগ্য বদলানো যাবে না। যদি কিছু বদলানো যায়, তা হল ভাগ্যে যা আছে তা অর্জন হেতু আমাদের পথচয়ননৈতিকতা এবং বিশ্বাস। [Symbol] একটা বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শেষ করি।  
‘By failing to prepare, you are preparing to fail.’ [Symbol]  

No comments:

Post a Comment

রোগ- সাইকো গল্প

সকাল ৮টা   অ্যালার্ম  ঘড়ির প্রচণ্ড  বি রক্তিকর  শব্দে ঘুম ভাঙল মোহনার।  বিছানায়  শুয়ে  থেকে পুরো ঘরটার ওপর  একবার চোখ  বুলিয়ে   নিল  ...