Friday, 23 June 2017

কিয়ামাত


একটি ফুঁৎকার শোনা গেলো, শুধুমাত্র একটি মাত্র ফুঁৎকার!  
আর অমনি জমিন ও পর্বতমালা সরিয়ে নেয়া হল। সবকিছু এক আঘাতে চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে গেল। আকাশ বিদীর্ণ। গ্রহ-নক্ষত্র খসে পড়ছে!  কোথাও এতটুকু আলো নেই।  
দূরে সমুদ্র গুলোনে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে! কীভাবে আগুন লাগলো জানা নেই। হতে পারে সমুদ্রতটে কোনো বিশেষ গ্যাস উত্তলনের ফলে এমন হচ্ছে। কিন্তু এসব নিয়ে এখন ভাবার সময় নেই! এখন ভয়ঙ্কর প্রকম্পন হচ্ছে! এতটাই ভয়ঙ্কর যে স্তন্যদানকারী মা তার সন্তান কে ভুলে যাচ্ছে, গর্ভধারিনী তার গর্ভপাত করে ফেলছে! একে একে মানুষ, পশু সবাই বেহুঁশ হয়ে পড়ছে!  

ইসরাফিল আবার তার শিঙায় ফুঁক দিলেন। তিনি এ কাজের জন্য না জানি কত হাজার বছর ঠায় দাড়িয়ে ছিলেন।  
প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। আর এই বৃষ্টি থেকে উদ্ভিদের ন্যায় মানুষ উদ্গত হচ্ছে, হাজার হাজার, কোটি কোটি...   
মানুষদের অবাক অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, যেন তারা বুঝে উঠতে পারছে না যে ঠিক কি হচ্ছে। শেষ তাদের যা মনে পড়ছে তা হল, তারা তো মারা গিয়েছিলো... তাদের তো এখন জীবিত হওয়ার কথা ছিল না... নাকি ছিলো?! হুম, এখন অস্পষ্টভাবে কিছু কিছু মনে পড়ছে, বিচার, পুনুরুত্থান এগুলো নিয়ে কিছু মানুষ চিল্লাচিল্লি করত বটে, কিন্তু সেসব কথায় কর্ণপাত করা হয়নি কোনোদিনও। তবে কি এখন...? মানুষরা আরও ভীত হয়ে পড়ে।  

পুরো পৃথিবীটা কেমন যেন অপরিচিত লাগছে। কোথাও এতটুকু উচু-নিচু নেই, সব একেবারে সমান, যেন কোনো বিশাল ময়দান।   
ভয়ঙ্কর এক শব্দ শোনা গেলো! অদুরে তাকিয়ে দেখা গেলো বিশাল, অচিন্তনীয় গভীর এবং অন্ধকার এক বস্তুকে শেকল দিয়ে টেনে আনা হচ্ছে! বস্তুটি ভয়ানক গরম! আর তাকে যারা টেনে আনছে তারাও সংখ্যায় প্রায় লাখ খানিক তো হবেই! তারই ঠিক পাশেই, মনোরম কিছু কে এনে রাখা হল। বলে রাখা ভালো, এটিও সুবিশাল! লোকজন কে উৎসুক দেখা গেল এবার। তারা সবাই উলঙ্গ তবে সেদিকে যেন কারো কোনো ভ্রূক্ষেপই নেই। তাদের দেখে মনে হল তারা ওই সুন্দর ঘরটার মদ্ধে প্রবেশ করতে চায়।  
কিন্তু তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। করানো হবে। তবে কি একটা বিচারের পর নাকি। কোথায় সেই বিচারকাজ? অনন্ত কাল ধরে যেন তারা অপেক্ষা করছে অথচ কিছুই শুরু হচ্ছে না। তবে যখনই শুরু হোক না কেনো, একজন সুপারিশকারী থাকলে সুবিধে হয়!  

একদল মানুষ বের হয়ে আসলো। কাকে সুপারিশকারী হিসেবে সুপারিশ করার জন্য মিনতি করা যায়? এমন কাউকে হতে হবে অবশ্যই যিনি বিচারপতির কাছে মর্যাদাপ্রাপ্ত।  
ভেবে চিনতে আদম নামের মানুষটির নিকট যাওয়া হল। এই মানুষটি সবার আদি পিতা। তাকে সমস্ত ফেরেশতারা সেজদাও করেছিলেন। তিনি নিশ্চয়ই অনেক মর্যাদাবান!  
-‘হে আমাদের পিতা, আপনাকে সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, আপনি আমাদের জন্য তার নিকট সুপারিশ করুন...”  মানুষগুলো করুন ভাবে বলল।  
আদম (আ.সা.) কে তেমন আগ্রহী মনে হল না। তিনি বললেন, “আমি আল্লাহর এক আদেশ অমান্য করেছিলাম। আমি এখন নিজেকে নিয়েই চিন্তিত। তোমরা অন্য কারো কাছে যাও, আমি নিজেকে তোমাদের সুপারিশ করার যোগ্য মনে করি না।‘  

মানুষগুলো হতাশই হল। তবে খানিক পরেই তারা অন্য আরেকজন কে খুজতে লাগলো। আচ্ছা, ওই মানুষটার কাছে গেলে কেমন হয়? তার নাম নূহ, দ্বিতীয় আদম ও বলা হয়।  তার এক দোয়াতে নাকি পুরো পৃথিবীর সমস্ত অবিশ্বাসীদের একবারে নির্মুল করে দেয়া হয়েছিলো? তার কথা বিচারপতি নিশ্চয়ই শুনবেন!  
-“হে নূহ,আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন...”  
নূহ (আ.সা.) ও আগ্রহ প্রকাশ করলেন না। “আমি আজ নিজেকে নিয়েই চিন্তিত। তোমরা অন্য কাউকে খোঁজো।“  

অন্য কাউকে? আর কাকে? আর কে মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি আছেন?  
অদুরে একজন লম্বা মানুষ কে দেখা যাচ্ছে। তার পরিচয় বলে দিতে হয় না। তিনি সকল মুসলিম জাতির পিতা।   
-“হে ইব্রাহীম, আপনি খলিলুল্লাহ উপাধিপ্রাপ্ত। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুন, সুপারিশ করুন।“  
কোনোই লাভ হল না। ইনিও একই কথা বললেন।  
তারপর কে? কলিমুল্লাহ উপাধিপ্রাপ্ত মুসা? না রুহুল্লাহ উপাধিপ্রাপ্ত ঈসা? তারাও তো একিই কথা বলে ফিরিয়ে দিলেন। এখন উপায়?  
কে যেন বলল, শেষ চেষ্টা করে দেখা যাক। ওই মানুষটার কাছে যাওয়া যাক?  
কে উনি?  
ওনার নাম মুহাম্মাদ। (সা. আ. সা.)  
তার কাছে গেলে তিনি শুনলেন। এবং সেজদায় পড়ে গেলেন। বিচারপতির প্রশংসা করতে লাগলেন।  
কতক্ষণ অতিবাহিত হল এভাবে জানা নেই। হয়তো একসময় বিচারপতি সুপারিশের অনুমতি দিবেন। মানুষগুলো ঠায় প্রতীক্ষা করতে থাকে...  

দূরে শেকলে বাধা অনেক মানুষ দেখা যাচ্ছে। তাদের পোষাক আলকাতরার, আর আগুন তাদের চেহারা ঢেকে ফেলেছে।   
আরেক মানুষকে দেখা যাচ্ছে ভয়ানক অবস্থায়! তার পেটের নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে এসেছে, আর সে সেগুলোর চারিপাশে গাধার মত ঘুরপাক খাচ্ছে! উৎসুক একদল মানুষ সেই লোককে জিজ্ঞেস করলো, “কি হে! তোমার আজ এই অবস্থা কেনো? তুমি তো ভালো ভালো কথাই বলতে। সৎ কাজ করতে বলতে, অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলতে। তোমার এই হাল?”  
বেচারা উত্তরে বলে, “হ্যাঁ, আমি সৎ কাজের আদেশ করতাম, কিন্তু নিজে করতাম না। অসৎ কাজে নিষেধ করতাম, কিন্তু আবার নিজে ঠিকই করতাম! আজ তাই আমার এই করুণ পরিণতি ভাই!”  
  
এত করুণ দৃশ্য বেশিক্ষণ দেখা যায় না। দূরে তাকালে দেখা গেলো অনেক উজ্জ্বল আলো, যেন কোনো সুর্য! ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সেগুলো আসলে মুকুট, দুইজন ব্যক্তি পরে রয়েছেন। লোকেরা বলাবলি করতে লাগ্লো, তারা হয়তো কোনো নবী রাসুল? উত্তরে জানানো হবে যে, না, তারা কোনো নবী রাসুল নন। তারা একজন হাফেজের পিতা ও মাতা। তাদের কে আজ সম্মানিত করা হয়েছে।  

এমন আরো বহু ঘটনাই চখে পরবে এই সমতল ভুমির ওপর হাঁটলে, যা কিনা হাশরের ময়দান হিসেবে পরিচিত। পরবর্তী তে আরো ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করব..

No comments:

Post a Comment

রোগ- সাইকো গল্প

সকাল ৮টা   অ্যালার্ম  ঘড়ির প্রচণ্ড  বি রক্তিকর  শব্দে ঘুম ভাঙল মোহনার।  বিছানায়  শুয়ে  থেকে পুরো ঘরটার ওপর  একবার চোখ  বুলিয়ে   নিল  ...